ফরিদপুরে শ্রেণিকক্ষে বাবা-ছেলেকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল
ফরিদপুরের মধুখালীতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে বাবা-ছেলেকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনে দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় কুতুব উদ্দিন নামের এক যুবককে আটক করা হয়।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক নারীর নেতৃত্বে বাবা-ছেলেকে নির্যাতন করেন এক যুবক ও উঠতি বয়সী কয়েক তরুণ। ভিডিওটি ভাইরাল হলে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে অপরাধীদের শাস্তি দাবি উঠেছে।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্র জানায়, গত ১৭ মার্চ উপজেলার আড়ুকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণি কক্ষে তালা দিয়ে তাদের নির্যাতন করা হয়। নির্যাতিত ইয়ামিন মৃধা রাজু ও তার ছেলের নাম রাজন মৃধা। তারা মাঝকান্দী গ্রামে মো. সালাম শেখের বাড়িতে দীর্ঘদিন ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছেন। তাদের বাড়ি উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের (সালমতপুর) রউফনগর গ্রামে। নদী ভাঙনে ভিটামাটি হারিয়ে প্রায় ১২ বছর মাঝকান্দি এলাকায় ভাড়া থাকেন। নিজের মেয়ে ও বোনকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলে পরিকল্পিতভাবে তাদের নির্যাতন করা হয়।
হেমায়েত হোসেন নামের স্থানীয় এক যুবক জানান, যদি ধর্ষণের ঘটনা হয়ে থাকে তার বিচার করবে প্রশাসন। এমনকি ঘটনার সময় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, কোনো মেম্বার বা কোনো জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।
পাশের মির্জাকান্দী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কুদ্দুস হোসেন ভেল্কি নিউজকে বলেন, এটা প্রাইমারি স্কুলের ঘটনা। ঘটনার দিন আমি এলাকায় ছিলাম না। তবে ঘটনা শুনেছি।
এ ব্যাপারে আড়ুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইসরাত জাহান লিপি ভেল্কি নিউজকে বলেন, ওই ছাত্রী আমাদের স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার মা নেই। বাবা ও ভাই জুটমিলের শ্রমিকের কাজ করেন। কয়েক মাস আগে সে শিক্ষকদের জানায় তার বাবা ও ভাই তাকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করেন। ১৫-২০ দিন আগে সে আমার সঙ্গে ফরিদপুরের বাসায় চলে আসে। এরপর তাকে বুঝিয়ে তার বাবা ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেই।
নির্যাতনের ভয়ে গত ১৪ মার্চ আবার আমার বাসায় চলে আসে। ১৭ মার্চ তার বাবা-ভাইকে স্কুলে ডেকে আনা হয় বিষয়টি জানার জন্য। এ সময় স্থানীয়রা বিষয়টি জেনে তারাও চলে আসেন। মেয়েটি সবার সামনে তার সঙ্গে খারাপ আচরণের বিষয়টি স্বীকার করে। পরে স্কুলের একটি রুমের মধ্যে বহিরাগতরা তাদের মারধর করে। তবে নির্যাতনকারীদের আমি চিনি না।
এ বিষয়ে নির্যাতনের শিকার ও স্কুল ছাত্রীর বাবা ইয়ামিন মৃধা রাজু ভেল্কি নিউজকে বলেন, স্কুলশিক্ষক ইসরাত জাহান লিপির কোনো সন্তান নেই। তিনি আমার মেয়েকে লোভ-লালসা দিয়ে তার কাছে নিয়ে রাখতে চান। এর আগেও তিনি আমার মেয়েকে আমাদের না জানিয়ে তার বাসায় নিয়ে গেছেন। পরে খুঁজে তার বাসায় পেয়েছি। তিনি আমার মেয়েকে নিয়ে তার কাছে রাখতে চান। ১৭ মার্চ আমাকে ও আমার ছেলেকে স্কুলে ডেকে নিয়ে লোকজন দিয়ে প্রথমে ভয়ভীতি দেখিয়ে স্ট্যাম্পে লিখিত দিতে বলেন। রাজি না হলে আমার-ছেলের নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলে নির্যাতন করেন।
আড়ুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কবিরুজ্জামান ভেল্কি নিউজকে বলেন, এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে। তবে মারামারির সঙ্গে আমাদের শিক্ষকরা কেউ জড়িত নয়। স্থানীয় কিছু লোকজন শ্রেণিকক্ষে তাদের মারধর করে। আমরা জানতে পেরে পুলিশে খবর দেই। পুলিশ এসে তাদের নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে মধুখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এ ঘটনায় ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ও শিক্ষকরা জড়িত আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হবে।
মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম ভেল্কি নিউজকে বলেন,
এ ঘটনায় মেয়ের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় কুতুবউদ্দিন নামের একজনকে আটক করা হয়।


For all latest news, follow The Velkinews Google News channel.